~ কলমে এলেবেলে সোমাশ্রী ~
“”দাদান দাদান, ওই দেখো খরগোশ আর তার পাশেই একটা তিমি মাছের লেজ দেখা যাচ্ছে!”” কমলেশবাবু মনে মনে হাসলেন, নাতনিটি ঠিক তার মতনই নেশায় মেতেছে। ছোট থেকেই আকাশ তাকে বড় টানতো, মেঘের মধ্যে পশু পাখির ছবি খুঁজে বেড়াতেন আর রাতের আকাশে তারামণ্ডল। তারপর কর্মসূত্রে দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর আবহাওয়াদপ্তরে কাটিয়েছেন, তাই মেঘেররাজ্যের হাল-হকিকত তার নখদর্পনে।””আচ্ছা দাদান মেঘ কী গো? ওরা কোথা থেকে ভেসে আসে?”” তিন্নির প্রশ্ন। পাশ থেকে গিন্নি বললেন, “”নাও এবার ঠেলা সামলাও। আমি চা করে আনি, খাবে তো? তৃণার মিটিং বোধহয় এখনো শেষ হয়নি! ওকেও একটু চা দিয়ে আসি। এই ছাতার ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এ ওদের চাপ আরও বেড়েছে। আট ঘণ্টার জায়গায় দশ ঘন্টা ধরে খাটাচ্ছে। এই তিন্নি তোকে কী দেব? কমপ্ল্যান খাবি তো?””
করোনার জেরে কর্তা-গিন্নি এখন ছেলে-বৌমার ফ্ল্যাটে বন্দি। ডাক্তার দেখাতে এসে আটকে পড়েছেন। যদিও প্লেন চলা শুরু হয়েছে, তবুও ওরা কিছুতেই ছাড়বে না। এদিকে কমলেশ আর নলিনীর দমবন্ধ অবস্থা, অবসর জীবনে দুজনে মিলে বেশ বাগান নিয়ে মেতে ছিলেন, কিন্তু এখানে এসে শুধু এই ছাদটুকুই ভরসা, ঘরবন্দি জীবনে সামান্য মুক্তির স্বাদ মেলে এখানে এলেই। “”ও দাদান, বললেনাতো”” তিন্নি পাশ থেকে খোঁচা দিল।
“”বেশ শোনো তবে, খুব সোজা করে যদি বলি, মেঘ হলো অসংখ্য পূঞ্জিভূত জলকণা বা বরফের কণা যা বাতাসে ভেসে থাকে। আমরা যখন ভেজা জামা কাপড় রোদে মেলে দি, কয়েক ঘন্টা পর দেখি সেগুলো শুকিয়ে গেছে, তাহলে জামাকাপড়ে যে জল ছিল তা কোথায় গেলো বলতো দিদিভাই?”” তিন্নি অবাক হয়ে বললো “”সত্যিই তো দাদান, জলগুলো কোথায় যায়? “” “”জল আসলে সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে জলীয়বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না! ঠিক এভাবেই প্রতিমুহূর্তে নদী, সাগর, মহাসমুদ্র বা যে কোন জলাশয় থেকে সূর্যের তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে, গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। আর জলীয়বাষ্প খুব হালকা হওয়ায় তা ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে, ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে ওঠা যায় বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। ঠিক এই কারণেই পর্বতের চূড়াতে বরফ জমে। যায় হোক, ওই জলীয়বাষ্প সেই ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলে ঘনীভূত হয়ে জলকণা বা বরফের কণায় পরিণত হয়। ওই ঘনীভূত জলকণা বা বরফকণা বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, এমনকি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া, লবণের কণা ইত্যাদির চারপাশে জমতে শুরু করে এবং মেঘের কণায় পরিণত হয়। কখনো কখনো ওই জলকণা বা বরফের কণা একে অপরের সাথে জুড়ে গিয়ে আকারে বড় হয়ে যায়, তখন সেগুলি আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারেনা, অভিকর্ষের টানে বৃষ্টি বা তুষারপাত বা শিলাবৃষ্টি রূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে নেমে আসে। মজার ব্যাপার কি জানো তো দিদিভাই আমরা কিন্তু ঘরে বসে একটা বড় কাঁচের বোতলের মধ্যেও মেঘ তৈরি করে ফেলতে পারি””। “”ওমা তাই? আমাকেও শিখিয়ে দেবে দাদান? “” তিন্নি খুব মজা পেয়েছে। “”বেশ, সে পরীক্ষা পরে একদিন করে দেখাবো তোমায়। তবে হ্যাঁ, যদিও ওরা দেখতে অমন তুলোর মতো কিন্তু শরতের আকাশের ঐ রকম এক-একটা মেঘের ওজন প্রায় ৫ লক্ষ কেজি অব্দি হতে পারে””! “”বাবা! এত ভারী?”” তিন্নি চোখ গোল গোল করে বললো। “” “”তাহলে ওরা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে না তো দাদান? এত ভারী যখন!”” কমলেশ বাবু হেসে বললেন, “”না দিদিভাই, সেই ভয় নেই, যদিও একটা গোটা মেঘের ওজন প্রায় ১০০ টা হাতির সমান, কিন্তু মেঘেদের ঘনত্ব হয়ে থাকে কম বেশি ০.৫ গ্রাম প্রতি ঘন সেন্টিমিটার, যেখানে বিশুদ্ধ জলের ঘনত্ব ১ গ্রাম প্রতি ঘন সেন্টিমিটার। এর থেকেই অনুমেয় যে ভর অনেক বেশি হলেও মেঘেরা অনেক বেশী আয়তন জুড়ে থাকে। আর আমি বললাম না, যে একটা বড় মেঘ অসংখ্য ছোট ছোট জলকণা বা বরফের কণা মিলে তৈরি, তাই যদি ওই এক একটি জলের কণা কে নিয়ে ভাবি, তবে তার ওজন তার চারপাশের বাতাসের চেয়েও কম। ফলে ওরা বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী বলের দরুণ ভেসে থাকতে পারে, ঠিক যেমন ধুলোবালি বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাছাড়া মেঘ কিন্তু কোন কঠিন বস্তু নয়, তুমি হয়তো ভাবলে এরোপ্লেন থেকে লাফ দিয়ে একটা মেঘের ওপর গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে! তা কিন্তু সম্ভব নয়, মেঘ পরিবর্তনশীল, প্রতিমুহূর্তে ওদের আকার আকৃতি পাল্টে যায়, প্রতি মুহূর্তে ওরা তৈরি হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে। মেঘেরা একদিনে কয়েকশো মাইল ভেসে আসতে পারে!”
“”তবে মেঘের রং অমন সাদা কেন হয়? আর বৃষ্টির মেঘ কালো? “” তিন্নির প্রশ্ন। “”এর উত্তর জানতে গেলে তোমায় বুঝতে হবে, কোনো জিনিসকে আমরা কীভাবে দেখতে পাই? তার আগে বলি, সাদা আলো হলো সাতটি রংয়ের সমষ্টি। যে সাতটি রং আমরা রামধনুতে দেখতে পাই। আর সূর্য থেকে যে আলো আসে, তা সাদা অর্থাৎ তাতে ঐ সাতটি রং মিশে থাকে। এখন কোন জিনিসকে আমরা তখনই দেখতে পাই যখন সূর্যের আলো বা আর যেকোন আলো ঐ বস্তুর ওপর পড়ে এবং ঐ বস্তু থেকে সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে, যদি ঐ বস্তু থেকে কোন আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে না পড়ে তবে সেই বস্তু কে আমরা দেখতে পাবো না অর্থাৎ সেই স্থানটি অন্ধকার দেখাবে! ঠিক সেইরকম ভাবে মেঘের মধ্যে অসংখ্য জলকণা বা বরফকণাতে সূর্যের আলো পড়ে, বিক্ষিপ্ত হয়ে সাতটি রঙের সমষ্টি রূপে আমাদের চোখে এসে পড়ে, তাই ওদেরকে সাদা দেখায়! কিন্তু বৃষ্টির মেঘ অনেক বেশি ঘন এবং অনেক উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, ফলে বেশীরভাগ সূর্যের আলো মেঘের উপরের অংশ দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম আলো এসে পৌঁছায় মেঘের নীচের অংশে। এছাড়াও বৃষ্টির মেঘের মধ্যের জলকণার আকার অনেক বড় হয় সেগুলি সূর্যের আলোকে অনেকাংশেই শোষণ করে নেয় ফলে মেঘের ওই অংশ থেকে খুব কম পরিমাণ আলো বিক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ে, তাই ওদেরকে অমন ধূসর-কালো রংয়ের দেখতে লাগে।”” “”কীরে, দাদানের কাছে আজ কিসের গল্প শুনছিস এত মন দিয়ে? “” চায়ের কাপ হাতে তৃণা হাজির। “”কী বৌমা, তোমার মিটিং শেষ হলো? “” কমলেশবাবু প্রশ্ন করলেন। “”হ্যাঁ বাবা, আজকের মতন কাজ শেষ।”” “”মা, তুমিও শোনো না। দাদান বলেছে, আমাকে মেঘ চিনিয়ে দেবে, আরো কত্ত গল্প শুনলাম, মেঘ কী করে হয়!”” তিন্নি উচ্ছ্বসিত। “”ওমা তাই নাকি? বেশ তো আমিও শিখেনি তবে তোমার দাদানের থেকে”” তৃণা মজা করে বলল।””আচ্ছা বাবা, আবহাওয়ার পরিবর্তনে মেঘের ভূমিকা ঠিক কতখানি? মানে ধরুন, আবহাওয়াদপ্তর থেকে যখন পূর্বাভাস দেওয়া হয় যে, আগামী দুদিন বৃষ্টি হবে বা কালবৈশাখী ঝড় আসছে, সেক্ষেত্রে কী শুধু কালো মেঘ দেখে বলে দেওয়া যায় যে বৃষ্টি হবে?”” তৃণা প্রশ্ন করল। কমলেশবাবু চুপ করে দুমিনিট ভাবলেন, তারপর শুরু করলেন, “”দেখো, খুব সংক্ষেপে যদি বলি, তবে বলাই যায়, মেঘ আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে, আবার আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে মেঘও প্রভাবিত হয়! মেঘ প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পৃথিবীর ওপর দুই তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে মেঘের আচ্ছাদন। সূর্যের আলোর কিছু অংশ যেমন মেঘের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়, যার জন্য পৃথিবীপৃষ্ঠ শীতল থাকে, তেমনি পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত সূর্যের আলো মেঘের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে, ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠ উষ্ণ হয়। এই দুয়ের নিয়ন্ত্রনে নির্ধারিত হয় পৃথিবীপৃষ্ঠের উষ্ণতা। এছাড়াও মেঘ বদলের সাথে সাথে বদলে যায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, যা পৃথিবীতে জলের পরিমাণ ও সরবরাহ কে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ আমাদের কৃষিকাজ, জীবনযাপনও পরোক্ষভাবে মেঘের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়! তবে আজকাল উপগ্রহ চিত্র দ্বারা মেঘ পর্যবেক্ষণ করা হয় দিনের প্রতিটি মুহূর্ত, এছাড়াও রয়েছে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর কম্পিউটার মডেল, যা আবহাওয়ার পরিবর্তন অন্বেষণ করতে আবহাওয়াবিদদের সাহায্য করে। তাই আজকাল আর অমন মেঘ দেখেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হবে, সেই ব্যাপারটা নেই, তবে মেঘ পর্যবেক্ষণ করে তার তথ্য দেওয়া হয়, বাকি কাজ কম্পিউটারই করে দেয়, বরং আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদান, যেমন বায়ুর চাপের পরিবর্তন, বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি, উষ্ণতার পরিবর্তন ইত্যাদির সঠিক পর্যবেক্ষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আসন্ন ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে। জানোতো, নাসা পৃথিবী ছাড়াও অন্যান্য গ্রহের মেঘও পর্যবেক্ষণ করে! মঙ্গল গ্রহের মেঘ, কিছুটা পৃথিবীর মতো। আর অন্যান্য গ্রহ গুলির মেঘের উপাদান কিন্তু জল নয়, যেমন বৃহস্পতির মেঘ অ্যামোনিয়া দিয়ে তৈরি। শুক্র গ্রহের মেঘে তো আবার ফসফিন পাওয়া গেলো!”” তৃণা চুপ করে শুনছিল সব, মাঝ থেকে তিন্নি বলে উঠলো “”বাব্বা! কী কঠিন ব্যাপার! আচ্ছা দাদান তুমি এবার আমায় বল মেঘ ঠিক কটা?”” কমলেশবাবু হাসতে হাসতে নাতনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন “”কটা না দিদিভাই, বল কত প্রকারের? উচ্চতা এবং আকৃতির উপর নির্ভর করে মেঘকে মোটামুটি দশ ভাগে ভাগ করা হয়। ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার উচ্চতায় তৈরি হয় যে মেঘ, তাদেরকে আমরা হাই ক্লাউড বা উঁচু মেঘ বলতে পারি। এদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা ১) সিরো স্ট্যাটাস ২) সিরো কিউমুলাস আর ৩) সিরাস। ২ থেকে ৮ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকে যে মেঘ তাদেরকে আমরা বলি, মিডক্লাউড বা মধ্য আকাশের মেঘ। এদেরকেও তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ১) অল্টো স্ট্যাটাস ২) নিম্বো স্ট্যাটাস এবং ৩) অল্টো কিউমুলাস। সবশেষে আসে একদম মাটির কাছাকাছি তৈরি হওয়া মেঘ। এরা শূন্য থেকে দুই কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে তৈরি হয়, তাই এদেরকে আমরা বলি, লো-লাউড বা নীচু মেঘ। এদের কে আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়। ১) স্ট্যাটাস ২) কিউমুলাস ৩) স্ট্র্যাটো কিউমুলাস ৪) কিউমুলোনিম্বাস। এমনকি কুয়াশাকেও আমরা স্বল্প উচ্চতার স্ট্যাটাস মেঘ বলে ধরতে পারি।গোটা আকাশকে মোট ৮ ভাগে ভাগ করে নিয়ে, মেঘ পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি আট ভাগ জুড়েই মেঘ থাকে, তবে আমরা তাকে বলব সম্পূর্ণ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।এবার চলো তোমায় কিছু মেঘের ছবি দেখাই , তবেই বুঝতে পারবে কোনটা আসলে কি মেঘ। “ বলে, কমলেশ বাবু নিজের ফোনটা নিয়ে তৃণা আর তিন্নিকে মেঘের ছবি দেখাতে লাগলেন। এসবই তার নিজের হাতে তোলা ছবি। বিভিন্ন সময়, পর্যবেক্ষণ করতে করতে মেঘের ছবি তুলে একটা এ্যালবাম বানিয়ে রেখেছেন তিনি।
ছবি দেখে তিন্নি ভীষণ খুশি। এবার ও খুব আশাবাদী, যে সব রকম মেঘ চিনে ফেলেছে।
“”আমার আরও একটা প্রশ্ন আছে বাবা””,
তৃণা বলে উঠল। “”লক্ষ্য করে দেখেছি, কালবৈশাখীর সময় বাজ পড়ে, কিন্তু বর্ষাকালে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি যাকে বলে, তা হয় না! এমনটা কেন?”” “”এটা বেশ ভালো প্রশ্ন করেছো তুমি”” কমলেশবাবু শুরু করলেন -“”এর মূলে রয়েছে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ। এটিই একমাত্র মেঘ, যা কিনা শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি, এমনকি সাইক্লোনও ঘটাতে পারে! এই মেঘ তৈরি হয় গ্রীষ্মকালে বা বসন্তকালে, যখন আবহাওয়া জলীয়বাষ্পপূর্ণ থাকে। আমাদের এখানে কালবৈশাখী ঝড়ের মূলে এই মেঘ। এরা সুবিশাল, অনেক স্তরযুক্ত এবং অনেক উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যার ক্ষমতা হিরোশিমায় ফেলা প্রায় ১০টি পরমাণু বোমার সমান! এই সুবিশাল গঠনের জন্য, এই মেঘের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জলকণা এবং বরফকণা উপস্থিত। আর এদের পারস্পারিক ঘর্ষণের ফলে ধনাত্মক আধানগ্রস্থ প্রোটন কণা এবং ঋণাত্মক আধান যুক্ত ইলেকট্রন কণা তৈরি হয়। দেখা গেছে, জলকণাগুলি ঋণাত্মক আধান গ্রস্থ হয় এবং তুলনামূলক ভারী হওয়ায় মেঘের নীচের দিকে অবস্থান করে আর ধনাত্মক আধান গ্রস্থ কণা, মেঘের উপরের অংশে থাকে, অর্থাৎ মেঘের মধ্যেই আধান এর বিভাজন হয়ে যায়, অপরদিকে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে ধনাত্মক আধানযুক্ত কণা বর্তমান। আমরা জানিই বিপরীত আধানযুক্ত কণা একে অপরকে আকর্ষণ করে, এর ফলে ভূপৃষ্ঠের ধনাত্মক আধান গ্রস্থ কণা মেঘের নীচের দিকের ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণা কে আকর্ষণ করে এবং বায়ুমন্ডলের মধ্যে একটা পথ তৈরি হয়, সেই পথ বরাবর মেঘের নীচের অংশের ঋণাত্মক কণাগুলি ভূপৃষ্ঠের ধনাত্মক কণার দিকে আকৃষ্ট হয়, ঠিক তখনই বিদ্যুতের ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। আর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে, সেই মুহূর্তে বাতাস হঠাৎ করেই প্রসারিত হয়ে যায় ঐ পথ তৈরী হওয়ার জন্য, এই কারণেই ভীষণ জোড়ে আওয়াজ হয়। যেহেতু শব্দের বেগ আলোর চেয়ে কম, তায় আগে বিদ্যুতের ঝলক দেখা যায় আর পরে শব্দ শুনতে পাই আমরা।একই ঘটনা মেঘেদের মধ্যে ঘটে, যার জন্য মেঘে মেঘেও বিদ্যুতের ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। অপরদিকে বর্ষার মেঘ তুলনামূলক পাতলা হয়, সেই মেঘে এই আধান তৈরীর ঘটনা তেমন ঘটে না তাই সেই সময় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি দেখা যায় না।
তাছাড়া দেখবে কমবেশী সব বাড়িতেই বড়ো ধাতব দণ্ড মাটি থেকে বাড়ির ছাদ এর উপর পর্যন্ত লাগানো থাকে, একে আমরা বজ্রবহ বলে থাকি। এটি আসলে বজ্রপাত আটকায়, কারণ মেঘের থেকে ঋণাত্মক আধান যখন আকৃষ্ট হয়, তা এই ধাতব দণ্ডের মধ্যে দিয়ে মাটিতে চলে যায়, ফলে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়না। ঠিক এই কারণেই বজ্র বৃষ্টির সময়ে বড়ো গাছের নীচে দাঁড়ানো উচিত নয়, কারণ গাছের মাথার ওপর দিকে ধনাত্মক আধান থাকে, যা মেঘের ঋণাত্মক আধান কে আকর্ষণ করে আর গাছের মধ্যে দিয়েই ঐ আধানের ক্ষরণ হয়, সে তুলনায় কোনো বড়ো বাড়ি বা গাড়ির মধ্যে থাকা বেশী নিরাপদ।””
“”কিগো, তোমরা সবাই কি আজ ছাদেই রাত কাটাবে? কটা বাজে সে খেয়াল আছে? “” ঘর থেকে নলিনীর চিৎকার ভেসে এলো। তৃণাও ব্যস্ত হয়ে ঘড়ি দেখে বলল, “”হ্যাঁ বাবা অনেক গল্প হয়েছে আজ, আটটা বেজে গেছে! চলুন, এবার নীচে যাওয়া যাক। বাকিটা আবার অন্য একদিন শুনবো। “” কমলেশবাবু, তিন্নি দুজনেই মাথা নাড়লো, “” চলো তবে এবার যাওয়া যাক আজকের মত এটুকুই থাক।”” তিন্নি লাফাতে লাফাতে নীচে গেল, ঠাম্মি কে ও মেঘেদের গল্প শোনাতে হবে যে।
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।