আমাদের কথা

 

তখন সময়টা খুব ভয়ঙ্কর। পৃথিবীর এক আদিমতম জীবের আগ্রাসনে গোটা পৃথিবী গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীন দেশের উহান শহরে আবির্ভাব হয় করোনা নামক ভাইরাসের এক নতুন রূপের। যে ভাইরাস এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাসের মারণ ক্ষমতাও ছিল অস্বাভাবিক। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরে সারা বিশ্বে। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানও নতজানু হতে বাধ্য হয়  এই আণুবীক্ষণিক জীবের ক্ষমতার সামনে। অগত্যা মানুষে মানুষে মেলামেশা বন্ধ হয় মানুষ হয়ে যায় গৃহবন্দি।

আদিম কাল থেকে মানুষ যখনই কোনও বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, যে বিপদের প্রতিকারের উপায় মানুষের জানা নেয় অথবা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। মানুষ ভয়ের বশবর্তী হয়ে নানা অপব্যাখ্যা, কুসংস্কারের আশ্রয় নিয়েছে। এই ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে সমাজমাধ্যমের সাহায্যে, এই অপব্যাখ্যা ও এই অনাহুত বিপদ মুক্তির নানা অবৈজ্ঞানিক পন্থা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে দাবানলের মতো। অনেক অসাধু ব্যবসায়ীও এই সুযোগের সৎব্যবহার করে মানুষের কাছে নানা অবৈজ্ঞানিক ওষুধ, টনিক, ইত্যাদি বিক্রি করতে শুরু করে। এমনকি মানুষ স্ববিরোধী নানান মতামতের চাপে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায়। 

ঠিক এমনই এক সার্বিক বিপদের সময় একদল বিজ্ঞান গবেষক এই অবৈজ্ঞানিক প্রবণতার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর তাগিদ অনুভব করে। এখান থেকেই ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় আমাদের সকলের প্রিয় ‘এলেবেলে’-র। এই অপবিজ্ঞান ও ছদ্মবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের এই গবেষকদল বেছে নেয় তাদের মাতৃভাষা বাংলাকেই। বিভিন্ন বিভাগ, যেমন, তাইনাকি, আলেখ্য, চালচিত্র, ছোট ও বড় গল্প-এর মধ্য দিয়ে আমরা বিজ্ঞানকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। আমাদের উদেশ্য ভাষার প্রতিবন্ধকতার ঊর্ধ্বে উঠে বিজ্ঞানকে সকল সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসা। তবে আমরা বিজ্ঞানকে সহজলভ্য করতে গিয়ে লেখাতে বিজ্ঞানের সরলীকরণ করি বটে কিন্তু তাতে বৈজ্ঞানিক সত্যতার সাথে কোনোরূপ আপোষ না করেই।

এলেবেলে তৈরী হয়েছিল কয়েকজন মানুষের হাত ধরে পরবর্তীকালে আরও অনেক মানুষ আমাদের সাথে যোগ দেন। বিজ্ঞানের হাত আরও শক্ত হয়ে ওঠে।  এলেবেলে দলবল ছাড়াও আমাদের বিজ্ঞান লেখাতে অবদান রয়েছে অনেক নামি-অনামী বিজ্ঞান লেখকের।  আমাদের ফেসবুক সমাজমাধ্যমে এলেবেলে বিজ্ঞান বৈঠকে আড্ডা জমান প্রায় হাজার বিশেক মানুষ। আমাদের আশা, আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় একদিন বিজ্ঞানের আলো কুসংস্কারের গভীরতম অন্ধকারকেও আলোকিত করবে।         

error: Content is protected !!