~কলমে অম্লান রায় ~
৭ মে, ২০২৩ তারিখে “কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি ভারতীয় বেদান্তের মায়াবাদী দর্শনকে সমর্থন করে ?” , এই শিরোনামে আমার একটা লেখা ‘এলেবেলে‘ তে প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে আমি ‘কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা নীতির’ জনক হাইজেনবার্গের বিখ্যাত Thought Experiment এর ভিত্তিতে বলেছিলাম যে একটা কণা বা ইলেকট্রনের অবস্থান জানতে গেলে তার উপর আলো বা গামা রশ্মি ফেলতে হবে এবং এই আলোক-কণার অভিঘাতে ইলেকট্রনের ভরবেগের পরিবর্তন অবশ্যাম্ভাবি ও পরিমাপের এই মৌলিক সীমাবদ্ধতার কারণেই অনিশ্চয়তার নীতি আসছে। জনপ্রিয় বিজ্ঞানে এবং শিক্ষামূলকভাবে হাইজেনবার্গের এই Thought Experiment সবাই ব্যবহার করেন। তবে সম্প্রতি (২০১২ সালে) J. Erhart ও তাঁর সহযোগীরা এবং Lee A. Rozema ও তাঁর সহযোগীরা ‘নেচার ফিজিক্স’ ও ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁদের পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান যে হাইজেনবার্গের এই সহজ ধারনাটি সব ক্ষেত্রে সঠিক নয়। অবশ্যই অপেরেটার গণিতের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত ‘কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা নীতির’ বিমূর্ত ও আনুষ্ঠানিক (abstract and formal) যে রূপটি আছে, সেটি সর্বদাই সঠিক। তাছাড়া বর্তমানে হাইজেনবার্গের পরিমাপ ভিত্তিক ‘ অনিশ্চয়তা নীতির’ একটি সঠিক ও সাধারণ রূপ জানা গেছে এবং Erhart ও Rozema পরীক্ষা দ্বারা তার সত্যতা প্রমাণ করেন। ‘এলেবেলের’ কয়েকজন পাঠকও ‘কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা নীতির’ বিমূর্ত ও আনুষ্ঠানিক রূপটিকে নিয়ে সমাজ মাধ্যমে লিখেছিলেন এবং এই ভাবে উপস্থাপনা করতে বলেন। এই বিষয়টির সাথে কোয়ান্টাম তথ্য প্রযুক্তিরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেই কারণে এই বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখছি । আমি অবশ্য চেষ্টা করছি আলোচনাটাকে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের স্তরেই রাখতে, যাতে ‘এলেবেলের’ উপযুক্ত হয়।
১৯২৭ সালে হাইজেনবার্গ তাঁর বিখ্যাত গবেষণা পত্রে বলেন যে একটা কণার অবস্থান পরিমাপের ত্রুটি (অর্থাৎ অবস্থানের প্রকৃত মান ও পরমাপ করে পাওয়া মানের মধ্যে সম্ভাব্য পার্থক্য) এবং পরমাপের অভিঘাতজনিত কারণে ভরবেগের যে বিভ্রাট (Disturbance) হবে, তাদের গুণফল সর্বদাই h/4π এর বেশি হবে (যেখানে π=৩.১৪(প্রায়)হচ্ছে একটা বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত) এবং h হচ্ছে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, যার মান ব্যবহারিক এককে অতি ক্ষুদ্র। হাইজেনবার্গ একটা Thought Experiment থেকে বলেন গামা রশ্মির সাহায্যে একটা কণার অবস্থান নির্ণয় করলে, তার সর্বনিম্ন ত্রুটি হবে গামা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (λ)মতন এবং এর অভিঘাতে কণাটির ভরবেগের পরিবর্তন হবে h/λ এর মতন। অতএব অবস্থানের সর্বনিম্ন ত্রুটি ও তার পরিমাপের অভিঘাতে ভরবেগ পরিবর্তনের গুণফল হবে h এর মতন। অনেকে প্রশ্ন করেন যে তাহলে কি কণাটির x-স্থানাঙ্ক নির্ণয় করতে গেলে ভরবেগের Y-component এ পরিবর্তন হবে? না, তা হবে না। কারণ Thought Experiment এ আলোক-কণা X-অক্ষ বরাবর ফেলা যায় এবং আলোক-কণার প্রতফলিত হয়ে ফিরে আসার সময় থেকে x-স্থানাঙ্ক নির্ণয় করা যায় (ঠিক যে ভাবে রাডার এর সাহায্যে দূরত্ব নির্ণয় করা হয় )। কাজেই ভরবেগের Y-component কে কোন ভাবে প্রভাবিত না করে অবস্থানের x-স্থানাঙ্ক নির্ণয় করা যায়। কাজেই সঠিকভাবে বললে হাইজেনবার্গ বলেছিলেন যে অবস্থানের x-স্থানাঙ্ক নির্ণয়ের অভিঘাতে ভরবেগের X-component পরিবর্তিত হবে এবং x-স্থানাঙ্ক নির্ণয়ের সর্বনিম্ন ত্রুটি ও তার অভিঘাতে ভরবেগের X-component এর পরিবর্তনের গুণফল প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক h এর মতন হবে। যদি h এর মান শূন্য হত (সনাতনী পদার্থবিদ্যা), তাহলে অবশ্য খুব ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (উচ্চ কম্পাঙ্কের) আলোক-কণারও শক্তি প্রায় শূন্য হতো ও তার জন্য অভিঘাতও প্রায় শূন্য হতো এবং সেক্ষেত্রে একই সাথে যে কোন সূক্ষ্মতায় কণার অবস্থান ও ভরবেগ নির্ণয় করা যেত। অবশ্যই কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার স্বপক্ষে হাইজেনবার্গের এই Thought Experiment ছিল অনুসন্ধানমূলক বা শিক্ষামূলক (heuristic proof) এবং সাধারণভাবে এটা সব ক্ষেত্রে সঠিক নাও হতে পারে।
১৯২৯ সালে H. P. Robertson কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির বিমূর্ত ও সাধারণ রূপটিকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার formal proof দেন
এর পরে ১৯২৯ সালে H. P. Robertson কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির বিমূর্ত ও সাধারণ রূপটিকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার formal proof দেন। ধরা যাক, A একটি Hermitian Operator, [অর্থাৎ তার গড় মান বা eigenvalue একটা বাস্তব রাশি, যার মধ্যে (-1) এর বর্গমূল নেই।]। ধরা যাক A এর প্রমাণ বিচ্যুতি বা standard deviation হচ্ছে std(A)। standard deviation বা প্রমাণ বিচ্যুতি হচ্ছে পরিসংখ্যানের একটা ধারণা। std(A) এর অর্থ, A এর গড় মান (তাত্ত্বিকভাবে eigen value) থেকে A এর বিভিন্ন মানের পার্থক্যের বর্গের গড়ের বর্গমূল। ধরা যাক B আরেকটি Hermitian Operator এবং তার প্রমাণ বিচ্যুতি হচ্ছে std(B)। এখন যদি আগে A, পরে B, না আগে B পরে A কাজ করবে, তার উপর ফলাফল নির্ভর করে, তাহলে বলা হয় A ও B পরস্পর commute করে না বা তাদের বিনিময় করা যায় না। যদি তাদের বিনিময় করা না যায় এবং AB-BA=-ih/2π হয় (যেখানে i হচ্ছে -1 এর বর্গমূল), তাহলে Schwarz এর অসমীকরণ (একটি গাণিতিক অসমীকরণ) ব্যবহার করে Robertson প্রমাণ করেন যে std(A) এবং std(B) এর গুণফল সর্বদাই h/4π (যেখানে h প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক) এর থেকে বড় হবে। এখানে A ও B এর প্রমাণ বিচ্যুতি [std(A) এবং std(B)] তাত্ত্বিকভাবে গণনা করা হয়েছে। একই কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতি Schrodinger এর তরঙ্গ সমীকরণ থেকে পাওয়া তরঙ্গ অপেক্ষকের (wave function) Fourier Transform ব্যবহার করেও পাওয়া যায়। এটা কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির বিমূর্ত ও সাধারণ রূপ এবং সর্বদাই সত্য। তবে এখানে পরিমাপের কোন কথা নেই এবং এটা একটা গাণিতিক উপপাদ্য হিসাবে A ও B এর বিনিময় না হবার (anticommutation) সূত্র ও তাদের Hermitian চরিত্র অথবা Schrodinger এর তরঙ্গ সমীকরণ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার এই বিমূর্ত রূপটি ছাত্র-ছাত্রী বা সাধারণ মানুষের কাছে বিমূর্তই থাকে এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুর্বোধ্য থেকে যায়। এই দুর্বোধ্যতার ফাঁক গলে ধর্মীয় মায়াবাদ অনুপ্রবেশ করে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এখন কেবলমাত্র একাডেমিক আলোচনার বিষয় নয়, কোয়ান্টাম তথ্য প্রযুক্তি শিল্প আজ বাস্তবে আসছে। হ্যাকিং মুক্ত গুপ্তলিখন (cryptography) এর কাজে কোয়ান্টাম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ১৯৪০ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটারির (Bell Laboratory) এর গণিতজ্ঞ ক্লদ ই শ্যানন প্রথম গাণিতিক প্রমাণ দেন যে যদি মূল লিপিটির (যাকে গোপন রাখতে চাইছি) সাথে সমান দৈর্ঘ্যের গুপ্ত চাবিকাঠি (secret key) যোগ করে পাঠানো হয় এবং একটা গুপ্ত চাবিকাঠি কেবলমাত্র একবারই ব্যবহার করা হয় (অর্থাৎ পরের লিপির জন্য ভিন্ন গুপ্ত চাবিকাঠি দরকার), তা হলে গুপ্ত লিপিগুলি বিশ্লেষণ করে কোনভাবেই আর মূল লিপিগুলি পাওয়া যায় না। অবশ্যই গুপ্ত চাবিকাঠিগুলি প্রেরক গ্রাহককে গোপনে পাঠিয়ে দেবেন এবং তা গোপন রাখা হবে। ব্যপারটা ব্যাঙ্ক এর One Time Password (OTP) এর মত। এখন এই গুপ্ত চাবিকাঠি (OTP) ফোন মারফৎ পাঠালে, কেউ তো মাঝপথে তাকে এমনভাবে intercept করতে পারে, যে প্রেরক ও গ্রাহক জানতেই পারবে না যে মাঝ পথে আরেকজন সেই OTP জেনে ফেলেছে। তাহলে উপায়? এখানেই কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতি ব্যবহার করা হচ্ছে। যদি এই গুপ্ত চাবি (OTP) ইলেকট্রন বা ফোটনের কৌণিক ভরবেগ বা polarization ইত্যাদির মাধ্যমে কোয়ান্টাম তথ্য হিসাবে পাঠানো হয়, তাহলে দাবি হচ্ছে এই কোয়ান্টাম তথ্য কেউ intercept করে পরিমাপ করলে, হয় তথ্যের বিকৃতি ঘটবে অথবা উপযুক্ত কোয়ান্টাম চ্যানেলে আওয়াজ (disturbance) উঠবে বা দুটোই হবে, ঠিক যেমন একটা কণার অবস্থান মাপতে গেলে তার ভরবেগের পরিবর্তন (disturbance) হয়। কাজেই প্রেরক ও গ্রাহক জানতে পারবে যে কেউ গুপ্ত চাবিকাঠি (OTP) intercept করেছে। অর্থাৎ কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতি বলছে যে কোয়ান্টাম তথ্য হিসাবে পাঠানো গুপ্তচাবি জানলেই (অবশ্যই পরিমাপের মাধ্যমে), তার বিকৃতি ঘটবে বা উপযুক্ত চ্যানেলে আওয়াজ উঠবে বা দুটোই ঘটবে। সুতরাং এই বিমূর্ত কোয়ান্টাম বিজ্ঞানকে প্রযুক্তিতে পরিণত করতে গেলে, পরিমাপের সাথে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির সম্পর্কটা স্থাপন করতেই হবে। কোয়ান্টাম কম্পুউটারেও এই বিষয়টা আসে। এছাড়া যে কোন অতি সূক্ষ্ম পরিমাপের ক্ষেত্রে, যেমন মহাকর্ষ তরঙ্গের পরিমাপে (২০১৭ এর নোবেল পুরষ্কার), পরিমাপ ও কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির সংযোগের প্রশ্ন উঠে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এখন কেবলমাত্র একাডেমিক আলোচনার বিষয় নয়, কোয়ান্টাম তথ্য প্রযুক্তি শিল্প আজ বাস্তবে আসছে
কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির সাথে পরিমাপের অবশ্যই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী একটা কণার অবস্থানের x-স্থানাঙ্ক মাপতে গেলে তার ভরবেগের X-component অবশ্যই বদলে যাবে, কারণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সে x-স্থানাঙ্কের অপারেটার ও ভরবেগের X-component এর অপারেটার বিনিময়যোগ্য নয় (অর্থাৎ আগে বা পরে কোন অপেরেটার কাজ করছে, তার উপর ফলাফল নির্ভর করে)। এই বিষয়টি নিয়ে M. Ozawa এর তাত্ত্বিক কাজ (২০০৩ সাল), J. Erhart ও Lee A. Rozema এর পরীক্ষামূলক কাজ (২০১২ সাল) এবং আরও অনেকের কাজের ভিত্তিতে হাইজেনবার্গের পরিমাপের ত্রুটি (error) ও পরিমাপজনিত অভিঘাতের (disturbance) অসমীকরণটির সংশোধন ও তার সাধারণীকরণ (Generalization) করা হয়েছে। ধরা যাক A ও B অপেরেটার পরস্পরের সাথে বিনিময় যোগ্য নয়, যেমন অবস্থানের x-স্থানাঙ্ক ও ভরবেগের X-component। এখন ধরা যাক পরিমাপ করে A এর গড় মান হল A_0 এবং তা নির্ণয়ের ত্রুটি হল error(A)। পরিমাপের ত্রুটি হচ্ছে A এর প্রকৃত মান থেকে A_0 এর মানের সম্ভাব্য পার্থক্য। এখানে সম্ভাব্য কথাটি আসছে, কারণ ত্রুটি নির্ণয়ের সাথে পরিসংখ্যানের যোগ আছে। এই পরিমাপের অভিঘাতে B এর মানের যে গড় পরিবর্তন হল, ধরা যাক তা Disturbance (B)। ধরা যাক, কোন পরিমাপ না করলেও কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী A ও B এর মানের তাত্ত্বিক প্রমাণ বিচ্যুতি বা Standard Deviation হচ্ছে যথাক্রমে std (A) ও std (B)। তাহলে std (A) ও std (B) এর গুণফল অবশ্যই সর্বদাই h/4π এর বেশি হবে, যেমন Robertson ১৯২৯ সালে বলেছিলেন। এছাড়া পরিমাপের ভিত্তিতে অন্য যে অসমীকরণটি সর্বদাই সঠিক হবে বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে, তা হল
[error(A)×Disturbance(B)+error(A)×std(B)+std(A)×Disturbance(B)] এই রাশিগুলির যোগফল সর্বদাই h/4π এর বেশি হবে। এই নতুন অসমীকরণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে হাইজেনবার্গের বলা [error(A)×Disturbance(B)] সর্বদা h/4π এর বেশি হবে, এমন নয়, কমও হতে পারে, তবে এই রাশিরও সরাসরি কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তায় অবদান আছে। সবচেয়ে বড় কথা হল যে পরিমাপের ত্রুটি, পরিমাপজনিত অভিঘাত (Disturbance) এবং তাত্ত্বিক প্রমাণ বিচ্যুতি (standard deviations), এই সবের সাহায্যে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতিকে সাধারণভাবে লেখা যায় এবং তা সর্বদাই সঠিক হবে। আরও দেখা যাচ্ছে যে পরিমাপের ত্রুটি ও পরিমাপজনিত অভিঘাত একই সাথে দুটোই কখনো শূন্য হতে পারে না, কারণ তা হলে অসমীকরণটি সিদ্ধ হবে না। যদি A এর পরিমাপের ত্রুটি শূন্য ধরি, তাহলে হয় B এর উপর পরিমাপজনিত অভিঘাত বেশি হবে অথবা A এর তাত্ত্বিক প্রমাণ বিচ্যুতি যথেষ্ট বেশি হবে, যাতে অসমীকরণটি সিদ্ধ হয়। অপরদিকে যদি A এর উপর পরিমাপ এমনভাবে করা হয়, যাতে B এর উপর তার অভিঘাত অর্থাৎ Disturbance(B) এর মান শূন্য হয়, তাহলে হয় A এর পরিমাপজনিত ত্রুটি অনেক বেশি হবে অথবা B এর তাত্ত্বিক প্রমাণ বিচ্যুতি যথেষ্ট বেশি হবে, যাতে অসমীকরণটি সিদ্ধ হয়।
অর্থাৎ হাইজেনবার্গ যে রকম পরিমাপের ত্রুটি ও তার অভিঘাতের গুণফল থেকে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার কথা প্রথমে (১৯২৭ সালে) বলেছিলেন, সেটার সরল রূপ সব ক্ষেত্রে সত্য না হলেও, পরিমাপের সাথে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নিগুড় সম্পর্ক রয়েছে এবং সেই সঠিক অসমীকরণটি মানুষ এখন জানতে পেরেছে। তার ফলে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা বিমূর্ত বিষয় থেকে ব্যবহারিক প্রযুক্তির বিষয় হতে পেরেছে। অপরদিকে পরিমাপের মৌলিক সীমাবদ্ধতার সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সম্পর্কটা বোঝা গেছে এবং কোন ধর্মীয় মায়াবাদের সাথে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতির সম্পর্ক স্থাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।