
চিত্র সূত্র: Colossal Biosciences via nature.com
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জিন-সম্পাদনা সংস্থা Colossal Biosciences ঘোষণা করেছে যে তারা ‘উলি মাউস’ বা লোমশ ইঁদুর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের বহুল আলোচিত উলি ম্যামথ পুনর্জীবনের প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষকদের দাবি, এই বিশেষভাবে জিন-সম্পাদিত ইঁদুরগুলির লোম উলি ম্যামথের মতো ঘন, লম্বা এবং সোনালি-বাদামি রঙের, যা ঠান্ডা পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের ইঙ্গিত দেয়। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আসলে ম্যামথ পুনর্জীবিত করার পথে একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
Colossal Biosciences-এর দৃষ্টিভঙ্গি
Colossal Biosciences, যা বর্তমানে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের কোম্পানি, বেশ কয়েক বছর ধরে বিলুপ্ত প্রজাতিগুলিকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। সংস্থাটির অন্যতম লক্ষ্য হল এশিয়ান হাতির জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের মধ্যে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা, যাতে তারা একসময় হারিয়ে যাওয়া তুন্দ্রার পরিবেশে পুনরায় বসবাস করতে পারে।
Colossal Biosciences-এর প্রধান নির্বাহী বেন ল্যাম এক বিবৃতিতে বলেন, “উলি মাউস আমাদের ডি-এক্সটিংশন মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা প্রমাণ করেছি যে আমরা জটিল জিনগত সমন্বয় পুনরায় তৈরি করতে সক্ষম, যা প্রকৃতিতে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিকশিত হয়েছে। এটি ম্যামথ-জাতীয় হাতি তৈরির পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
উলি মাউস তৈরির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
Colossal-এর বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ম্যামথদের জিনোম বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে তাদের লোম, তাপ সহনশীলতা, এবং চর্বি জমার বৈশিষ্ট্যের জন্য নির্দিষ্ট কিছু জিন দায়ী। এই জিনগত পরিবর্তনগুলি ইঁদুরের মধ্যে পুনঃপ্রবর্তনের জন্য বিজ্ঞানীরা CRISPR-এর মতো উন্নত জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। তারা আটটি নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন করেছেন, যার মধ্যে তিনটি সরাসরি ম্যামথের জিনোম থেকে অনুপ্রাণিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ইঁদুরগুলির লোম এবং রঙ পরিবর্তন একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও, এটি ম্যামথের জিনগত বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না। কারণ ইঁদুর ও ম্যামথের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন বছরের বিবর্তনীয় ব্যবধান রয়েছে। গবেষকদের প্রধান লক্ষ্য হল ম্যামথের জিন নিয়ে কাজ করে সেগুলো এশিয়ান হাতির মধ্যে সংযোজন করা, যাতে তারা ঠান্ডা পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
কিছু বিজ্ঞানী এই গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখলেও, অনেকে এটিকে ম্যামথ পুনর্জন্মের পথে খুব বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন না। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপোলজি-এর গবেষক স্টিফান রিসেনবার্গ বলেন, “এটি ম্যামথ তৈরি করার জন্য একটি বড় ধাপ নয়। এটি কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট জিন পরিবর্তন করা ইঁদুর মাত্র।”
ভিনসেন্ট লিঞ্চ, ইউনিভার্সিটি অফ বাফেলোর ইভোলিউশনারি জেনেটিসিস্ট, মনে করেন যে এই গবেষণায় ব্যবহৃত কিছু জিনগত পরিবর্তন আগে থেকেই ইঁদুরের মধ্যে বিদ্যমান ছিল, তাই একে ম্যামথ পুনর্জীবনের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে ধরা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, “আমি চাই যে এটি দেখাক যে ম্যামথ-নির্দিষ্ট পরিবর্তনগুলোর বাস্তব প্রভাব আছে, কিন্তু এখনো সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।”
ম্যামথ পুনর্জন্ম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
Colossal Biosciences-এর পরবর্তী পদক্ষেপ হল এশিয়ান হাতিদের মধ্যে এই জিনগত পরিবর্তনগুলি পরীক্ষা করা। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে হাতিদের মধ্যে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য সংযোজনের মাধ্যমে তাদের ঠান্ডা পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তবে, বিজ্ঞানীদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল এই পরিবর্তনগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরীক্ষা করা, কারণ বড় স্তন্যপায়ীদের জিনগত পরিবর্তন পরিচালনা করা ছোট প্রাণীদের তুলনায় অনেক কঠিন।
Colossal Biosciences শুধুমাত্র উলি ম্যামথ নয়, বরং ডোডো এবং তাসমানিয়ান টাইগারের মতো অন্যান্য বিলুপ্ত প্রাণীদের পুনর্জীবিত করার দিকেও কাজ করছে। তবে, অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন যে বিলুপ্ত প্রজাতির পুনর্জন্মের চেয়ে বিদ্যমান বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
Colossal Biosciences-এর উলি মাউস তৈরির সাফল্য জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে। যদিও এটি সরাসরি ম্যামথ পুনর্জন্মের প্রমাণ নয়, এটি ভবিষ্যতে আরও বড় স্তন্যপায়ীদের জিনগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য হল প্রাচীন বিলুপ্ত প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ জিনগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রবর্তন করা, যা দীর্ঘমেয়াদে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তির ব্যবহার নৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আরও গবেষণা ও বিতর্কের প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদনটি লেখার ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়েছি কিন্তু প্রতিবেদনের বিষয় বস্তুর বৈজ্ঞানিক সত্যতা আমাদের দলবলের দ্বারা যাচায়িত।
সংবাদ সূত্র: https://www.nature.com/articles/d41586-025-00684-1