~ কলমে এলেবেলে মেঘদীপা ~
১৭৮৬ সালের অক্টোবর মাস। প্রাণীদেহের নিজস্ব তড়িৎ প্রবাহ সংক্রান্ত “অ্যানিম্যালি ইলেক্ট্রিসিটেট” শীর্ষক একখানা বই এসে পৌঁছাল ইতালির প্যাল্ভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে । বইটি এসছে পার্শ্ববর্তী বলগ্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অ্যালিসান্দ্র ভোল্টার নামে। বইটির প্রেরক এবং রচয়িতা হলেন স্বয়ং লুইগি গ্যালভানি। এই বইটির সার বক্তব্য এইরকম,- প্রাণীদেহ নিজস্ব একরকম তড়িৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। পশম বা সিল্কের সাথে কাঁচের দণ্ড ঘোষলে, শীতকালে শুকনো চুল কাঠের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে কিংবা হক্সবি যন্ত্রের হাতল ঘোরালে – অর্থাৎ যে ধাঁচের তড়িৎ এর সাথে এযাবৎ আমদের পরিচিত ঘটেছে, যা কিনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুটি অজৈব বস্তুকে একে অপরের সাথে ঘষার ফল, তার থেকে এইধরনের তড়িৎ আলাদা। এর ক্ষমতা অভাবনীয়। এমনকি এই বিশেষ প্রাণীজ তড়িৎ মৃত ব্যাঙের পেশিগুলোকেও নাড়িয়ে দিতে সক্ষম!
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকের যে সময়ের কথা বলছি তড়িৎ বা বিদ্যুৎ সম্পর্কে বিশদ ধারনা তখন প্রায় নেই বললেই চলে। আধুনিক বিজলি বাতি পাখার তো কোন প্রশ্নই আসেনা। যে ধারনাগুলো তখন পর্যন্ত জানা গেছে সেগুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজালে কিছুটা এরকম দাঁড়ায়,
১) কাঁচ, চামড়াজাত দ্রব্য, বেড়াল খরগোশের লোম, রেশমজাত দ্রব্য, কাঠ, সোনা, প্ল্যাটিনাম, তামা ইত্যদি কিছু পদার্থ আছে। যাদের একে অপরের সাথে ঘষলে এরা অভূতপূর্ব ‘আবেশ’ বিশিষ্ট হয়ে পড়ে। যার ফলে অল্প সময়ের জন্য হলেও এরা অন্য পদার্থকে আকর্ষণে সক্ষম হয়। এই আবেশকেই আজকের দিনে স্থির তড়িৎ বলে থাকি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- একটি শুকনো কাঁচের দণ্ডকে রেশমের কাপড় দিয়ে ঘষে, এরপর ওই কাঁচদণ্ডটি একটি পালকের ওপর ধরলে কোন এক অজানা আকর্ষণে পালকটি মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে ওপরে উঠে কাঁচদণ্ডের গায়ে লেগে যায়!
২) ১৭০৭ সালে ফ্রান্সিস হক্সবি নামধারী ব্রিটেনের “রয়্যাল সোসাইটি”-তে কর্মরত একজন বিজ্ঞানী এই ঘর্ষণের ওপর ভিত্তি করে বানালেন একটি বিস্ময় যন্ত্র। হক্সবি যন্ত্র (চিত্র-১)। এই যন্ত্রটিতে একটি কাঁচের বায়ুশূন্য গোলককে একটি হাতল মারফৎ ঘোরালে, গোলকটি যন্ত্র সংলগ্ন পশমের সাথে বারংবার ঘর্ষণপৃষ্ঠ হতে হতে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। এই যন্ত্র আবিষ্কারের পর, এক ভরা সন্ধ্যায় ঘর ভর্তি সদস্যদের সামনে তিনি দেখালেন এক আশ্চর্য পরীক্ষা। ঘরের সমস্ত আলোগুলোকে নিভিয়ে দিয়ে ঘোরাতে লাগলেন হাতলটি। অন্য হাতটি নিয়ে এলেন গোলকের কাছে। ঘর ভর্তি জ্ঞানীগুনিদের স্তম্ভিত করে এক নীলাভ আভা দেখা গেল হক্সবির হাতের তালু জুড়ে। ওই নীলাভ আলো আসলে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ যার সঠিক ব্যাখ্যা জানা যায়নি তখনও। বাকরূদ্ধ হলেন ঘরময় লোকজন। জানতেই পারলেন না যে তাঁরা সাক্ষী হয়ে থাকলেন মনুষ্যসৃষ্ট প্রথম “বৈদ্যুতিক আলো”-র।
৩) বিজ্ঞানীদের মধ্যে একধরনের ধারনা তৈরি হলো। তড়িৎ একধরনের তরল। ১৭৪৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী লেইডেন তো আরেক ধাপ এগিয়ে এই বিশেষ তরলকে ধরে রাখাতে কাঁচের তৈরি এক পাত্রই বানিয়ে ফেললেন। লাইডেন বানিয়েছেন বলেই এর নাম দেওয়া হলো ‘লাইডেন জার’ বা ‘লাইডেন পাত্র’। যে তড়িৎধারক আজকালকার দিনে বিদ্যুৎবর্তনীতে বহুল ব্যবহৃত, এই লাইডেন পাত্র তারই আদিরূপ!
৪) আর একটি বড় আবিষ্কারের কথা না বললেই নয়। ১৭৫২ সালে বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন প্রথম প্রমাণ করে দিলেন যে আকাশের ভয়াবহ বজ্রবিদ্যুৎ এবং ঘর্ষণ উদ্ভূত এই বেদ্যুতিক আবেশ, দুটোই কিন্তু আসলে একই ঘটনা! অর্থাৎ, এই প্রথম আকাশের ওই উজ্জ্বল বজ্রের একটি মোটামুটি যুক্তিযুক্ত ধারনা মানুষ জানলো। বোঝা গেলো এতে কিন্তু ঈশ্বরের তেমন কোন কৃতিত্ব নেই!
এই ঘটনাসূত্রগুলোর হাত ধরে ইতিমধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি অষ্টাদশ শতকের আশির দশকে। ইতালির বলগ্না বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী লুইগি গ্যালভানি তখন প্রাণীদেহে তড়িতের প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণায় মশগুল। এই পরীক্ষা করার জন্য একটি মরা ব্যাঙের শরীর এমনভাবে কাটাকুটি করলেন যাতে পা দুখানি কলেবরের বাদবাকি অংশের সাথে কেবল সংযোগকারী ক্রুরাল স্নায়ু দ্বারাই যুক্ত থাকে। এরপর হক্সবি যন্ত্রকে আবিষ্ট করে তা থেকে একটি ধাতব তার এনে ব্যাঙের শরীরে স্পর্শ করালেন এবং আর একখানি তার যার একপ্রান্ত মেঝেতে লেগে আছে সেটির অপরপ্রান্ত স্পর্শ করালেন ক্রুরাল স্নায়ুতে। লক্ষ্য করলেন এক অদ্ভুত ব্যাপার। মৃত ব্যাঙটির পা যেন নড়ে উঠল! আরও কিছু পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ মারফৎ তিনি এই সিধান্তে পৌঁছালেন যে – প্রাণীদেহ এক বিশেষ ধরনের আবিষ্ট তরল উৎপাদনের মাধ্যমে কাজ করে। এই তরলই মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু হয়ে পেশিতে তড়িৎপ্রবাহ ঘটায় এবং প্রাণীদেহকে সচল রাখে। জীবদেহে উৎপন্ন এই তড়িৎ কিন্তু যান্ত্রিকভাবে তৈরি তড়িৎ থেকে একদম আলাদা!
এই শেষের বক্তব্যটিকে কিছুতেই হজম করতে পারলেন না আমাদের গল্পের দ্বিতীয় চরিত্র অ্যালিসান্দ্র ভোল্টা। তিনি তখন ইতালির প্যাল্ভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পদার্থবিদ। ইউরোপ জুড়ে সে সময় যে যুক্তির ঝড় উঠছিল তিনি সেই মন্ত্রে দীক্ষিত। ভগবানের মহিমাকে যুক্তির তুরী মেরে নস্যাৎ করতে মোটেই পিছপা হন না। তড়িতের রহস্য তাঁকেও অনুপ্রাণিত করেছে গভীরভাবে। এবিষয়ে তাঁর নিজস্ব গবেষণাও চালাচ্ছিলেন তিনি। গ্যাল্ভানির পরীক্ষা নিরীক্ষা তাঁকেও অনুপ্রাণিত করেছে। তবে “জীবদেহে উৎপন্ন এই তড়িৎ কিন্তু যান্ত্রিকভাবে তৈরি তড়িৎ থেকে একদম আলাদা!” এই কথাটি কিছুতেই তাঁর যুক্তিবাদী মন মানতে চাইল না। তাঁর সোজা সাপটা বক্তব্য হল যদি তড়িৎ-ই হয় তাহলে সে জীবদেহ থেকেই আসুক আর যন্ত্র থেকেই আসুক, তা এক। এই যুক্তির ওপর নির্ভর করেই ভোল্টা গ্যাল্ভানির পরীক্ষা ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করলেন। নিজে করে দেখলেন। শেষে তিনি জানালেন, যে তড়িৎ প্রবাহ ব্যাঙের পায়ের পেশি সঞ্চালন করছে তা আসলে হক্সবি যন্ত্র থেকে উৎপন্ন হওয়া তড়িৎ। এতে আর কোন জাদু নেই!
ভোল্টার এই ব্যাখ্যা খুব দ্রুত এসে পোঁছাল গ্যাল্ভানির কানে। তাঁর তত্ত্বকে এইভাবে নস্যাৎ হতে দেখে দ্বিগুণ উদ্যম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন গবেষণার কাজে। মনের গভীরে তিনি সত্যিই মানতেন প্রাণের সৃষ্টিই হল ঈশ্বরের অসীম রচনার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। তাই একথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না যে, প্রাণের স্পন্দনের গুঢ় রহস্যটি মানুষ কখোনও জানতে পারবে বা নিজেদের কৃত্রিম উপায়ে তৈরি কিছু ‘খেলনা’ যন্ত্রের সাথে তার তুলনা করবে! শুরু হল তাঁর গবেষণার দ্বিতীয় অধ্যায়। হরেকরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শেষে একদিন একটি অবাক করা ঘটনা লক্ষ্য করলেন। পূর্বের ন্যায় কাটাকুটি করে তিনি একটি ব্যাঙ ঝুলিয়ে রেখেছিলেন লোহার তারে। এবারে একটি তামার তারের একপ্রান্তকে লোহার তারটির সাথে জুড়ে এর অপর প্রান্ত জুড়ে দিলেন ব্যাঙটির ক্রুরাল স্নায়ুর সাথে। কি আশ্চর্য, কি আশ্চর্য! ব্যাঙটির পা দূটো নড়ে উঠল! নাহ, এবারে সত্যিই কোন মনুষ্য নির্মিত তড়িৎ যন্ত্র ব্যাবহার করেননি তিনি। আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন। বুঝলেন তাঁর ধারন ভুল নয়। প্রাণীদেহের এই তড়িৎ সম্পূর্ণ অন্য, কোন অসামান্য ঘটনা। মানুষ কৃত্রিম উপায়ে যার প্রতিরূপ তৈরিতে অক্ষম। লিখে ফেললেন প্রাণীজ তড়িৎ সংক্রান্ত তাঁর বই “অ্যানিম্যালি ইলেক্ট্রিসিটেট”। এবং পত্রপাঠ এক কপি বই পাঠালেন প্যাল্ভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালিসান্দ্র ভোল্টার কাছে।
এবারে ভোল্টা পড়লেন মহাচিন্তায়। সত্যিই তো, এর ব্যাখ্যা তাহলে কি? গ্যাল্ভানির এই পরীক্ষা বারংবার পড়ে দেখলেন। না না না হিসেব কিছুতেই মিলছেনা!… হঠাৎ মনে হল, আচ্ছা এখানে ব্যাবহার করা দুই ভিন্ন ধাতুর তার কোন বিশেষ ভূমিকা পালন করছে নাতো? ভোল্টা সজাগ হলেন। ভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি দুটি মুদ্রা একটিকে আর একটির ওপর রেখে নিজের জিভে ঠেকিয়ে বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা সুরু করলেন। মনে হল যেন তড়িতের ক্ষীণ প্রবাহ অনুভুত হল। কিন্তু তা এতটাই মৃদু যে জোর দিয়ে কিছুই বলা যায় না। শুরু হল গভীর পড়াশুনা। বিভিন্ন বিজ্ঞান পত্রপত্রিকায় ইতিমধ্যে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলেন। আর তখনই চোখে পরল ইংরেজ বিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেন্ডিসের একটি বিশেষ গবেষণা।
টর্পেডো নামের একটি ভয়ঙ্কর মাছের সাথে ইউরোপবাসী তখন পরিচিত। ভয়ঙ্কর বলার কারণ হল, এই মাছকে ধরতে গেলে ঠিক কামড় দেয় না। বরং অদ্ভুতভাবে আঘাত করে! সেই অনুভূতি অনেকটা বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার মতই! ক্যাভেন্ডিস কৃত্রিম উপায়ে এই মাছের একটি যান্ত্রিক রূপ বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যাকে স্পর্শ করলে একইভাবে আহত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল! আর ঠিক এইখানেই নিজের গবেষণার সূত্র খুঁজে পেলেন ভোল্টা।
শুরু হল টর্পেডোর গঠন নিয়ে তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষা। চোখে পড়ল, এই মাছের পিঠের দিকের এক অদ্ভুত গড়ন। মনে হল যেন অনেকগুলো ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ একসাথে জুড়ে আছে… আচ্ছা এরকম কি হতে পারে যে এই এক একটা প্রকোষ্ঠ এক একটা ধাতব জোড়ের ন্যায় ব্যবহার করছে? প্রত্যেকটির নিজস্ব ক্ষীণ ক্ষমতা আছে স্বল্প তড়িৎ উৎপাদনের যেমনটা তিনি অনুভব করেছেন দুটি ভিন্ন ধাতুর জোড় জিভে ঠেকিয়ে! আর এরকম অনেক ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ মিলে আঘাত হানার মত পর্যাপ্ত তড়িৎ তৈরি করছে!!
ব্যাস, ভোল্টা লেগে পড়লেন তাঁর নিজস্ব কৃত্রিম টর্পেডো মাছ বানানোর প্রাক্রিয়ায়। প্রথমে একটি তামার বৃত্তাকার পাত রাখলেন। তার ওপর রাখলেন লঘু অম্লে ভেজা একটি কাগজ। আর তার ওপরে দস্তার একটি গোলাকার পাত রেখে তৈরি করলেন একটি ছোট স্তম্ভ। এরপর, এই স্তম্ভের ওপরে নীচে দুটো তার জুড়ে তারের অপর প্রান্ত নিজের জিভে ঠেকিয়ে দেখতে লাগলেন কতটা তীব্রতা টের পাওয়া যায়। ভোল্টার মতে তামা, অম্লে সিক্ত কাগজ আর দস্তার এই বিশেষ সজ্জা (চিত্র-২(ক).) টর্পেডো মাছের একটি ছোট প্রকোষ্ঠেরই অনুরূপ। এরকম আরও প্রকোষ্ঠ বানাতে এই সজ্জাকে একটির ওপর আর একটি জুড়তে লাগলেন। তীব্র থেকে তীব্রতর তড়িৎ প্রবাহ অনুভূত হতে লাগল জিভে। অর্থাৎ তিনি যা ভেবেছিলেন সে ধারনাই ঠিক! ওই ধাতু জোড়াই হল সকল রহস্যের চাবিকাঠি। ভোল্টা এভাবেই গ্যাল্ভানির তত্ত্বকে নস্যাৎ করে দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করে দিলেন, ওই পরীক্ষায় ব্যাঙের পা নড়ে ওঠার আসল কারণ, ওটার শরীরে লেগে থাকা দুই ধরনের ধাতব তার। এতে আর কোন দ্বিতীয় কারণ নেই।
আবিষ্কৃত হল তড়িৎ উৎপাদনের এক যুগান্তকারী উপায়। আর তড়িৎ উৎপন্ন করতে কষ্ট করে হক্সবি যন্ত্রের হাতল ঘোরাতে হবে না। শুধু এরকম একটা স্তম্ভ হলেই চলবে। ভোল্টায়িক স্তম্ভ (চিত্র-২)। মানবসভ্যতার আবিষ্কারের তালিকায় জুড়ে গেল আর একটি মাইল ফলক। আমরা পেলাম প্রথম ব্যাটারি অর্থাৎ তড়িৎকোষ।
অ্যালিসান্দ্র ভোল্টাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৮৮১ সালে ‘ভোল্ট’ শব্দটিকে তড়িৎ বিভবের একক হিসেবে মনোনীত করা হয়। যা বিজ্ঞান-জগতের বাইরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বহুল ভাবে প্রচলিত।
লুইগি গ্যাল্ভানি সে সময় ভুল প্রমাণিত হলেও আমরা জানি যে প্রাণীদেহে স্নায়ুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ চলাচল ও তার পরিপ্রেক্ষিতে পেশির স্পন্দনও নিছকই কোন ছোটখাটো আবিষ্কার নয়। কিন্তু ভোল্টায়িক স্তম্ভের চাকচিক্যে তখনকার মত তাঁর এই অবদান চাপা পরে যায়। গ্যাল্ভানির মৃত্যুর কয়েক বছর পরে, ১৮০৩ সালে, তাঁর ভাইপো বিজ্ঞানী গিওভালি আলদিনি জনৈক ফাঁসির আসামীর মৃতদেহ নিয়ে একটি ভয়ানক পরীক্ষা করেন দেখালেন জনসমক্ষে। একটি শক্তিশালী ভোল্টায়িক স্তম্ভের দু-প্রান্তের দুটি তারের একটি জুড়ে দিলেন মৃতদেহের কানে, অন্যটি তার পায়ুতে। আর সঙ্গে সঙ্গেই সকলে আতঙ্কিত করে দিয়ে নড়তে থাকল মৃতদেহের পা! এমনকি মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এল ডানহাতটি। পলকের জন্য ওপরেও উঠে এলো। ক্ষণিকের জন্য মনে হল, মৃতদেহে যেন প্রাণ ফিরে এসছে!
এই ঘটনা সেইসময় জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। মেরী সেলির “ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন” গল্পের আসল অনুপ্রেরণা ছিল এই ঘটনা। যাকিনা কল্পবিজ্ঞানের সর্বপ্রথম গল্প। যেখানে বলা হচ্ছে কিভাবে একজন বিজ্ঞানী পরীক্ষা করতে গিয়ে একটি মৃতদেহকে জাগিয়ে তোলেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এই গল্পই একরকমভাবে ইউরোপে বাঁধাধরা সংরক্ষণশীল যুগের অবসান ও এক নতুন যুগের উৎপত্তিকে ইঙ্গিত করে। এমন এক যুগ, যেখানে জাদুর কোন জায়গা নেই। জায়গা আছে শুধুমাত্র যুক্তির।
এলেবেলের দলবল
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।