১৬৯৯ সাল। স্থান জার্মানির হানোভার। নিজের বাড়িতে প্রাতরাশ টেবিলে বসে আমাদের কাহিনীর এক প্রধান চরিত্র, গটফ্রিড উইলহেল্ম লাইবনিৎস। আরামের গরমকাল শেষ প্রায়। এই সময়টাতে সকল ইউরোপবাসীর মেজাজ কিছুটা হলেও খিঁচড়ে থাকে। সুখের দিন শেষ হয়ে এলো বলে। গ্রীষ্ম শেষ মানেই মজা শেষ। মজা করার আবহাওয়াই থাকবে না। অবিরাম বৃষ্টি, নয় কনকনে ঠাণ্ডা। একদুই সপ্তাহে হয়তো একবার সূর্যের মুখ দেখা যাবে, তাও সে একবেলার জন্য। তাই সে সাঁতার কাটা বলো, পিকনিক করা বলো, বারবিকুউ করা হোক, বা সুইৎজারল্যান্ড ঘুরতে যাওয়া, সব ঐ গরমে। লাইবনিৎসও গেছিলেন। নিজের বন্ধু তথা সহকর্মী জেকব আর জোহান বারনোলির বাড়ি। সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে। এক অদ্ভুত পরিবার। বাপ, কাকা, ছেলে, নাতি সকলেই বিজ্ঞানচর্চা করে। এবং প্রত্যেকই বেশ নামকরা। এই পরিবারের অন্তত জনা দশেক লোক বিজ্ঞান জগতে অতুল সব কীর্তি রেখে গেছেন বা রাখবেন। গণিত, পদার্থবিদ্যা, স্থাপত্যবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, কি নেই তাতে। যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। হ্যাঁ, লাইবনিৎস তো সবে খেতে বসেছেন, এমন সময় পরিচারক এসে খবর দিল জোহান বারনোলি, বাসেল থেকে, একজনের হাত দিয়ে একটি বই ও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। বলেছেন ব্যাপারটা গুরুতর। আনমনে সাওয়ারক্রাউট (এক ধরনের গাঁজানো বাঁধাকপি) চামচে তুলে চিঠিটাতে চোখ বোলাতেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল লাইবনিৎসের। খুব ধীর গতিতে চামচ নামিয়ে রাখলেন। ডানহাতের একটু হালকা আঘাতে খাবারের প্লেটটাও সরিয়ে দিলেন। মুখ তুলে পরিচারককে গম্ভীরভাবে বললেন “”বইটা স্টাডিতে নিয়ে এস।”
এর আভাস বেশ কিছুদিন ধরেই পাচ্ছিলেন লাইবনিৎস। ব্যাপারটা গ্রাহ্য করেননি। কিন্তু আর না। জল মাথার ওপর চলে গেছে। এবার ওনার পালা বিপক্ষকে আঘাত করার। শুরু হল গণিত জগতের সব থেকে কুখ্যাত যুদ্ধ। এ কাহিনী, যশ, প্রতিপত্তি, লোভ, আর প্রতিহিংসার। এ কাহিনী গণিতের এক সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ার। আর, এ কাহিনী এক অতিসাধারন গণিতবিদের অসাধারন হয়ে ওঠার।
শুরু হল গণিত জগতের সব থেকে কুখ্যাত যুদ্ধ। এ কাহিনী, যশ, প্রতিপত্তি, লোভ, আর প্রতিহিংসার।
কাহিনীর শিকড় জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে আরও তিনটি দশক। ১৬৬৫ বা ৬৬ সাল হবে। ইংল্যান্ডে ভয়ানক ভাবে আক্রমণ করেছে বিউবনিক প্লেগ। লন্ডনের এক চতুর্থাংশ লোক মারা যাবে এই প্লেগের প্রকোপে। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি বন্ধ। ছাত্র অধ্যাপক সকলকে, আজকের ভাষায়, ‘হোম অফিস’ করতে বলা হয়েছে। বাড়িতে বসে কাজ। গবেষক আইসাক নিউটন চলে গেলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। গোটা ইংল্যান্ড এই দুবছর কাটালো চরম বিভীষিকায়। আর নিউটন কাটালেন তাঁর আশ্চর্য বছর। এই সময়ের মধ্যে নিউটন প্রিজম দিয়ে প্রতিসরণ করে দেখলেন সাদা আলো আসলে সাত বর্ণের আলোর সমষ্টি, আবিষ্কার করলেন মহাকর্ষ, আর, ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব। পুরোটাই একবছরের মধ্যে। ‘হোম অফিস’ করে। বড় বিজ্ঞানীদের জীবনে এরকম কিছু বিস্ময় বছর থাকে। যেমন আইনস্টাইনের জীবনে ১৯০৫। সে কথা আজ তোলা থাক। নিউটনেই ফিরে যাই।
‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্বই হল আমাদের আজকের চর্চার বিষয়। বাংলা মানেটা হল কোন পরিবর্তনশীল জিনিসের পরিবর্তনের হার। উনি ব্যবহার করেছিলেন মহাজাগতিক বস্তু, মানে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারার স্থান পরিবর্তনের হার, বা বিজ্ঞানের ভাষায় বেগ, বের করতে। একবার ভেবে দেখুন এই লোকটি এই দুদিন আগে মহাকর্ষ, অভিকর্ষ এসব আবিষ্কার করেছেন। এবার যে একটু ‘ছুটি’ ভোগ করবে, তা নয়। এবার সেই মহাকর্ষের দরুণ পৃথিবী, মঙ্গল, চাঁদ কি করে ঘোরে সেটা আগে হিসেব করে নিতে হবে। কিন্তু সবই হল, শুধু বেশি লোককে জানানো হল না। ঐ প্রিন্সিপিয়া বইয়ের কোথাও এক লাইন লিখে দিলেন। ইউনিভার্সিটি খুললে সেখানে গিয়ে দু-একজনের সাথে একটু আলোচনা করলেন। আর, কিছু বন্ধুস্থানীয় সহকর্মীকে চিঠি লিখে জানালেন। আসলে, সেই সময় এতো বিজ্ঞান পত্রিকা বেরত না। লোকে সেখানে লেখা ছাপার কথাও ভাবত না। এই শতকের শেষ দিকেই বিজ্ঞান পত্রিকাতে লেখা ছাপার চর্চাটা বড় করে শুরু হয়। তার আগে লোকে সহকর্মীদেরকে নতুন আবিষ্কারের ব্যপারটা বলাকেই গুরুত্ব দিত। নিউটনও তাই করলেন। ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্বের কোন বিশদ বিবরণ প্রায় কেউই জানলেন না।
নিউটন যখন ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব আবিষ্কার করছেন, লাইবনিৎস তখন উনিশ, কি বিশ। আইনের ছাত্র। তবে গণিতেও চৌখোশ, কিন্তু, একেবারেই নবিশ। ৫-৬ বছর পর, ১৬৭৩ সাল নাগাদ লাইবনিৎসের মনে মোটামুটি একটা গাণিতিক ধারনা আসতে শুরু করেছে যেটাকে আমরা পরবর্তী কালে কলনবিদ্যা হিসেবে জানবো। তবে ব্যাপারটা এখনও সুস্পষ্ট নয়। সরকারি কাজে লাইবনিৎস এলেন ইংল্যান্ডে। না, নিউটনকে উনি চিনতেন না। তবে, নিউটনের একদুজন সহকর্মীর সাথে কথা হল। তাঁদের সাথে পরে বহুদিন অব্দি তাঁর পত্রালাপ হয়েছে। এখানেই লাইবনিৎস এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নিজের কলনবিদ্যার প্রাথমিক ধারণার কথা পাড়েন। প্রাথমিক ধারণার বলছি ঠিকই কিন্তু সেটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। সংযোগ করা খুব মুস্কিল। উনি জানতে পারলেন রেগনড নামে আরেক গণিতজ্ঞ সেটা আগেই আবিষ্কার করে বসে আছেন। লাইবনিৎস অবশ্য পুরো ব্যাপারটা মেনে নেন। নিজের খাতাপত্রও দেখান সকলকে। তবে আরেকদিন তাঁর সাথে যা ঘটল তা কোনও বিজ্ঞানীই ভাল ভাবে নিতে পারে না।
লাইবনিৎস একটি গণকযন্ত্র বানিয়েছিলেন। সেটাই চালিয়ে দেখাচ্ছিলেন সকলকে। বিজ্ঞানী হুক লাফিয়ে পড়লেন। খুব আগ্রহ দেখিয়ে করতে লাগলেন খুঁটিনাটি প্রশ্ন। লাইবনিৎসও সরল বিশ্বাসে উত্তর দিয়ে চললেন। এমনকি যন্ত্র পুরো খুলিয়ে দেখলেন হুক। শেষে বাইরে এসে বললেন “”এ যন্ত্র অনেক সহজেই বানানো যেত। এ ছোকরা বেশি জটিল করে ফেলেছে।” নিজে একটি গণকযন্ত্র বানালেন লাইবনিৎসের নীতি অনুযায়ী। কিন্তু, লাইবনিৎসের কোনও কৃতিত্ব স্বীকার না করে। বন্ধুমহলে লাইবনিৎস এ নিয়ে বেশ উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞান সম্পর্কে একটা হালকা বিতৃষ্ণা জন্মে গেছিল সেদিন থেকেই।
যাই হোক, কেটে গেলো আরও দু বছর। এখন লাইবনিৎসের কাছে কলনবিদ্যা পুরো পরিষ্কার। নিউটনের সহকর্মী ওলডেনবার্গের সাথে চিঠি চালাচালি চলছে পুরদমে। নিউটনের সাথেও পত্রালাপ শুরু হয়ে গেছে। নিউটন নিজের ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব ভাসাভাসা বলেছেন। লাইবনিৎস একদিন গুছিয়ে নিজের কলনবিদ্যার কথা ব্যাখ্যা করলেন নিউটনের কাছে। নিউটন বুঝলেন ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব আর কলনবিদ্যা আসলে একই জিনিস। শুধু প্রতিকচিহ্নগুলো আলাদা। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, আজ আমরা যে চিহ্ন ব্যবহার করে কলনবিদ্যা করি (∂ আর ∫) সেগুলো লাইবনিৎসেরই সূচনা করা। এমতাবস্থায় দুজনেই জানেন যে তাঁরা স্বাধীনভাবে কলনবিদ্যা আবিষ্কার করেছেন। নিউটন আগে, কিন্তু একটু অগোছালো ভাবে; লাইবনিৎস পরে, কিন্তু বেশ গুছিয়ে, আঁটঘাট বেঁধে, ফাঁকফোকর বুজিয়ে। দিন কেটে যাচ্ছিল।
এবার বিজ্ঞান পত্রিকা বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। ১৬৮৪ সালে লাইবনিৎস অ্যাক্টা ইরুডিটরাম নামে এক জার্মান বিজ্ঞান পত্রিকাতে নিজের কলনবিদ্যার কথা বেশ ফলাও করে ছাপলেন। নিউটন পাত্তা দিলেন না। হয় উনি লেখাটাই দেখেননি। আর দেখলেই বা কি? উনি তো জানেন লাইবনিৎস দ্বিতীয়। প্রথম তো উনি নিজে।
নব্বইয়ের দশক। এবার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। জন ওয়ালিস কিছু বই আর প্রবন্ধ লিখলেন।
নব্বইয়ের দশক। এবার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। জন ওয়ালিস নামে এক ব্রিটিশ গণিতবিদ কিছু বই আর প্রবন্ধ লিখলেন। নিউটন ততদিনে বেশ হোমরা-চোমরা। বেশ তাঁবেদার জুটে গেছে অনেককটি। নিউটনের সুনজর তখন সকলের চাই। ওয়ালিস লিখলেন নিউটনের ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব নিয়ে। ভাল কথা। কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললেন। উনি প্রকারান্তরে বললেন যে লাইবনিৎস ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব চুরি করে কলনবিদ্যা বলে চালাচ্ছেন। প্রমাণ হিসেবে দেখানো হল উনি আগেও নাকি রেগনডের কাজ চুরি করেছেন। নিউটন, লাইবনিৎস কেউ পাত্তা দিলেন না। ১৬৯৬তে জোহান বারনোলি একটি অঙ্ক দিলেন পত্রিকায়। এমন অঙ্ক যা কেবল কলনবিদ্যার সাহায্যে সমাধান করা যাবে। লাইবনিৎস একটি তালিকা দিলেন কারা এই অঙ্ক সমাধান করতে পারবেন। সেই তালিকায় তাবৎ দিকপালের নাম। হ্যাঁ, নিউটনের নামও ছিল। উনি সমাধানও করেছিলেন। আরও দু-একজন সফল হলেন। কিন্তু, পুরো ব্যাপারটায় গোঁসা হল আরেক জনের। ফাটিও ডি ডুইলার। জাতে সুইস। ইনি এতদিন লাইবনিৎসের অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু তালিকাতে নাম না হওয়ায় উনি ক্ষুণ্ণ হলেন। সত্যি কথা, নাম থাকার মতো সেরকম কোনও বড় গবেষণা উনি করেননি। নাটকে প্রবেশ হল ফাটিওর। ১৬৯৯এর মার্চে লিখলেন নিজের অনুসন্ধান কাহিনী। পরিষ্কার ভাষায় লাইবনিৎসের বিরুদ্ধে আনলেন চুরির অভিযোগ। সেই বই দিয়েই আজকের কাহিনী শুরু হয়েছিল। যা বাধ্য করেছিল লাইবনিৎসকে কিছু একটা করতে।
কি আর করবেন লাইবনিৎস? সব বুঝিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখলেন অ্যাক্টাতে। ফাটিও নাছোড়। উনিও অ্যাক্টাতে প্রবন্ধ পাঠালেন এই দাবি করে যে লাইবনিৎস মিথ্যে বলছেন। এবার গল্পে অল্প অল্প করে জাত্যভিমান ঢুকতে শুরু করেছে। আর নিউটন বনাম লাইবনিৎস নয়; বরং ব্রিটিশ বিজ্ঞান বনাম জার্মান বিজ্ঞান। অতএব অ্যাক্টা ছাপলো না ফাটিওর প্রবন্ধ। লাইবনিৎস ভেবেছিলেন নিউটন নিশ্চয়ই কিছু বলবেন। তিনিতো সব জানেন। তিনিতো জানেন কি কৃতিত্ব লাইবনিৎসের প্রাপ্য। তিনি একবার বললেই সবাই চুপ হয়ে যাবে। নিউটন কিন্তু টুঁ শব্দটি করলেন না। লাইবনিৎস ধরে নিলেন নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। নিউটন তবে মেনে নিচ্ছেন লাইবনিৎস চোর। একপ্রকার বাধ্য হয়েই এবার সব জেনেশুনেও লাইবনিৎস নিউটনের বিরুদ্ধে আনলেন পালটা চুরির অভিযোগ। ১৭০৪ সালে নিউটন ‘ফ্লাক্সিওন’ তত্ত্ব নিয়ে লিখলে লাইবনিৎস বেনামে সেই লেখার গুষ্টির ষষ্টি পূজো করে ছেড়েছিলেন। যাই হোক ঠান্ডা লড়াই চলল আরও বেশ কয়েক বছর। শেষে জন কাইল নামে আর এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এসে আবার ঘা উস্কে দিলেন। সেই একই কথা। নিউটনের আবিষ্কার ঝেড়ে দিলো লাইবনিৎস। সাথে আবার প্রমাণ স্বরূপ লাইবনিৎসের লেখা কিছু চিঠি চাপাটি। সে চিঠি থেকে আর যাই হোক কলনবিদ্যা বের করা অসম্ভব। আজকে হলে ধোপে টিকত না। কিন্তু সেদিন টিকল। লাইবনিৎস তখন বেশ ভেঙ্গে পড়েছেন। চারদিক থেকে এতো চুরির অভিযোগ! বয়স হচ্ছে। আর পারছিলেন না। লাইবনিৎস এবার করলেন একটা শেষ চেষ্টা। আর সেটাই তাঁর জীবনের সব থেকে বড় ভুল। উনি সব জানিয়ে চিঠি লিখলেন ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে। আর রয়্যাল সোসাইটির নতুন সভাপতি ঠিক এটিই চাইছিলেন। সাথে সাথে গোপন কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করা হল। ১৭১২ সালে কমিটি জানাল তদন্তের ফল। “”নিউটন কলনবিদ্যার আবিষ্কারক। লাইবনিৎস চুরি করে চিহ্ন পাল্টে নিজের বলে চালাচ্ছেন। তবে কমিটি কোনও আইনি পদক্ষেপ নিতে বলছে না।” লাইবনিৎস খুব দুঃখ পান। আর তার চার বছর পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিউটন নাকি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। হয়ত লাইবনিৎস ওনার ভুলটা পরে জানতে পেরেছিলেন। রয়্যাল সোসাইটিকে যখন উনি চিঠি লেখেন তখন ওখানকার সভাপতি নিউটন নিজে। চিঠি লেখার সময় লাইবনিৎস ঘুণাক্ষরেও সেটা জানতেন না। লোকে বলে, নিউটন নিজে কমিটির রিপোর্ট লিখে সদস্যদের দিয়ে সই করান। এতো গুরুতর অভিযোগের কারণে শেষ জীবনটা অকৃতদার লাইবনিৎসের খুব ভাল কাটেনি। জনপ্রিয়তা গিয়ে ঠেকেছিল তলানিতে। কে আর ‘চোরের’ সাথে থাকতে চায়? ওনার শেষকৃত্য হানোভারেই সারা হয়েছিল, খুব সাদামাটা ভাবে। বার্লিনের জার্মান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সও পাত্তা দেয়নি এই ‘চোরকে।’ দীর্ঘ ৫০বছর ওনার কবরের ওপর কোনও ফলক ছিলনা। লাইবনিৎস হেরে গেছিলেন নিউটন ও তাঁর বিরাট সংখ্যক অনুগামীদের কাছে। ওনার পাশে শেষ অব্দি ছিল শুধু এক বন্ধু, জোহান বারনোলি। আর কেউ না।
আজ প্রায় তিনশ বছর পর সবাই স্বীকার করে নিয়েছে এই অসাধারন গণিতবিদের কৃতিত্ব। শুধু গণিতবিদ নয়। একজন মহান দার্শনিক, পদার্থবিদও। শুধু কলনবিদ্যা আবিষ্কারের পুরো অর্ধেক কৃতিত্ব ওনার নয়। দ্বিমূল বা বাইনারি সংখ্যা (যা দিয়ে কম্পিউটার চলে), আকৃতিবিদ্যা (টোপোলজি, আকৃতির জ্যামিতিক অধ্যয়ন), আধুনিক যুক্তিবিদ্যা, সবই ওনার হাত ধরে। নিউটনের থেকে কম কোথায়? তাই বোধ হয় ওনাকে বলা হয় ‘শেষ সর্বজনীন প্রতিভা’ (the last universal genius)।
~ কলমে এলেবেলে প্রত্যয় ~
এলেবেলের দলবল
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।
লেখাটি পঠিত হয়েছে বার
“