
প্রতীকী চিত্র (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরী)
সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আলোক মাইক্রোস্কোপির ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। গবেষকরা এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা প্রচলিত অন/অফ সুইচিং কৌশল ব্যবহার না করেও ন্যানোমিটার স্তরের সুপার-রেজোলিউশন অর্জন করতে সক্ষম। এই নতুন প্রযুক্তির ফলে জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র এবং ন্যানোটেকনোলজির মতো ক্ষেত্রগুলোতে গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে।
আলোক মাইক্রোস্কোপির সীমাবদ্ধতা ও সুপার-রেজোলিউশনের গুরুত্ব আলোক মাইক্রোস্কোপির ক্ষেত্রে রেজোলিউশনের সীমা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আলোর তরঙ্গধর্মী প্রকৃতির কারণে প্রচলিত আলোক মাইক্রোস্কোপির রেজোলিউশন সাধারণত প্রায় ২০০-২৫০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, যা বেশিরভাগ প্রোটিন এবং কোষীয় গঠন পর্যবেক্ষণের জন্য অপর্যাপ্ত।
সুপার-রেজোলিউশন মাইক্রোস্কোপি হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যা আলোর এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ন্যানোমিটার স্তরে বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে। সাধারণত, স্টেড (STED), পাল্ম (PALM) ও স্টর্ম (STORM) মাইক্রোস্কোপির মতো পদ্ধতিগুলোতে ফ্লুরোসেন্ট অন/অফ সুইচিং ব্যবহার করা হয়। এতে ফ্লুরোসেন্ট অণুগুলো নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জ্বলে ওঠে ও নেভে, যা বিশদ পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়। তবে, এই পদ্ধতিগুলো বেশ জটিল এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় এর কার্যকারিতা সব ক্ষেত্রে সীমিত ছিল।
নতুন গবেষণার পদ্ধতি: অন/অফ সুইচিং ছাড়াই ন্যানোমিটার স্তরের রেজোলিউশন গবেষক দলটি এমন একটি আলোক রশ্মি ব্যবহার করেছেন, যার কেন্দ্রে শূন্য তীব্রতা (zero-intensity) লাইন রয়েছে। এই বিশেষ আলো ব্যবহার করে নমুনা স্ক্যান করা হয়, যা ফ্লুরোসেন্ট অণুগুলোর সংকেত প্রদান প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
এই পদ্ধতিটির কার্যক্রম কীভাবে কাজ করে?
১. শূন্য তীব্রতা লাইন: গবেষকরা এমন একটি আলোক রশ্মি তৈরি করেছেন, যার একটি অংশে কোনো আলো নেই অর্থাৎ শূন্য তীব্রতা বজায় থাকে।
- ফ্লুরোসেন্ট সংকেতের অনন্য প্রতিক্রিয়া: যখন এই আলোক রশ্মি নমুনার উপর প্রক্ষেপিত হয়, তখন একক ফ্লুরোসেন্ট অণু শুধুমাত্র তখনই কোনো সংকেত দেয় না, যখন এটি শূন্য তীব্রতা লাইনটির সাথে সঠিকভাবে সংযুক্ত হয়।
- সংকেত বিশ্লেষণ: যদি নমুনায় একাধিক ফ্লুরোসেন্ট অণু থাকে, তবে তারা বিভিন্ন অবস্থানে থাকে এবং সবসময়ই অন্তত একটি অণু আলো বিকিরণ করতে থাকে। এর ফলে, ফ্লুরোসেন্ট সংকেতের হ্রাস ও বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে অণুগুলোর অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
- অতি সূক্ষ্ম পৃথকীকরণ: এই কৌশলের মাধ্যমে গবেষকরা মাত্র ৮ ন্যানোমিটার দূরত্বে থাকা দুটি অণুকে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছেন। আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, তারা ২০ ন্যানোমিটার দূরত্বে থাকা তিন বা চারটি অণুর সমষ্টিকেও আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন।
এই উদ্ভাবনের সম্ভাব্য প্রভাব
এই নতুন পদ্ধতি সুপার-রেজোলিউশন মাইক্রোস্কোপিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের গবেষণাকে সহজতর করবে। এর মাধ্যমে—
✔ জীববিজ্ঞান গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ হবে: প্রোটিন, কোষের অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং অণুজীবের আরো সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।
✔ ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে: ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও ন্যানো-ডিভাইসগুলোর উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।
✔ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে: ক্যান্সার কোষ শনাক্তকরণ, ভাইরাল স্ট্রাকচার পর্যবেক্ষণ এবং ঔষধের মাইক্রোস্কেল কার্যকারিতা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
সুপার-রেজোলিউশন মাইক্রোস্কোপির ক্ষেত্রে এই নতুন পদ্ধতি সত্যিকার অর্থেই বিপ্লব ঘটিয়েছে। প্রচলিত অন/অফ সুইচিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ন্যানোমিটার স্তরের রেজোলিউশন অর্জনের ফলে গবেষণা ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কেবল গবেষণাগারেই নয়, চিকিৎসা ও শিল্পখাতেও অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি লেখার ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়েছি কিন্তু প্রতিবেদনের বিষয় বস্তুর বৈজ্ঞানিক সত্যতা আমাদের দলবলের দ্বারা যাচায়িত।
সংবাদ সূত্র : phys.org