
চিত্রসূত্র: নেচার পত্রিকা www.nature.com
পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় এক যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। গবেষকরা প্রথমবারের মতো দ্বিমাত্রিক সুপারসলিড পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা পদার্থের এমন একটি অবস্থা যেখানে কঠিন এবং সুপারফ্লুইড উভয় বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে বিদ্যমান থাকে। এই গবেষণা সুপারসলিড পদার্থের ধারণাকে আরও মজবুত ভিত্তি প্রদান করেছে এবং পদার্থবিজ্ঞানীদের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ করে দিয়েছে।
সুপারসলিড: কঠিন ও তরলের এক অদ্ভুত মিশ্রণ
সাধারণত, কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও গঠন থাকে, যেখানে সুপারফ্লুইড কোনো ঘর্ষণ ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু সুপারসলিড অবস্থায় এই দুটি বৈশিষ্ট্য একত্রে উপস্থিত থাকে, যা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর ঘটনা। এই অবস্থায়, পদার্থ একইসঙ্গে কঠিনের মতো সজ্জিত থাকে, আবার সুপারফ্লুইডের মতো প্রবাহিত হতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো একসঙ্গে থাকা সাধারণ পদার্থের ক্ষেত্রে বিরল।
গবেষণার পেছনের ইতিহাস
১৯৬৯ সালে তাত্ত্বিকভাবে সুপারসলিডের ধারণা প্রস্তাবিত হয়েছিল, তবে দীর্ঘদিন ধরে এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়নি। ২০২১ সালে, অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রান্সেসকা ফেরলাইনোর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল প্রথমবারের মতো একমাত্রিক সুপারসলিড তৈরি করতে সক্ষম হন। তারা অতি শীতল চৌম্বকীয় পরমাণু ব্যবহার করে এই সাফল্য অর্জন করেন। সাম্প্রতিক গবেষণায়, একই দল দ্বিমাত্রিক সুপারসলিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
দ্বিমাত্রিক সুপারসলিডের বৈশিষ্ট্য
দ্বিমাত্রিক সুপারসলিডে, পরমাণুগুলো কঠিন পদার্থের মতো সজ্জিত থাকে, তবে তারা সুপারফ্লুইডের মতো ঘর্ষণহীনভাবে প্রবাহিত হতে সক্ষম। এই অবস্থায়, একটি কণা একাধিক ড্রপলেট বা ফোঁটায় একই সঙ্গে অবস্থান করতে পারে এবং ভ্রমণ করতে পারে, যা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি গভীর ও রহস্যময় দিক প্রকাশ করে। গবেষকরা বলছেন, এই বৈশিষ্ট্য সুপারসলিড পদার্থের গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গবেষণার তাৎপর্য
এই আবিষ্কার সুপারসলিড পদার্থের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করেছে। গবেষকরা এখন দ্বিমাত্রিক সুপারসলিড সিস্টেমে ঘূর্ণন গর্ত বা কোয়ান্টাইজড ভর্টেক্সের গঠন ও আচরণ নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন, যা সুপারফ্লুইডের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বোঝার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। তবে বড় পরিসরে সুপারসলিড তৈরি করা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ এটি চৌম্বকীয় ফাঁদের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য এবং ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ম্যাথিউ নরসিয়া বলেন, “স্বাভাবিকভাবে আপনি ভাবতে পারেন, কোনো একটি পরমাণু নির্দিষ্ট একটি ড্রপলেট বা ফোঁটার মধ্যে পাওয়া যাবে। কিন্তু সুপারসলিড অবস্থার বেলায় এ কথা খাটে না। এখানে একটি কণা সব কটি ড্রপলেট বা ফোঁটায় একই সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রতিটি ড্রপলেটে অবস্থান করতে পারে।”
এই গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতে সুপারসলিড পদার্থের ব্যবহার বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিস্তৃত হতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সুপারকন্ডাক্টিভিটি, এবং তরঙ্গবাহী পদার্থে সুপারসলিডের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হবে। গবেষকদের আশা, সুপারসলিড পদার্থের নতুন এই পর্যবেক্ষণ একদিন আধুনিক প্রযুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে উঠবে।
———————————-
এই প্রতিবেদনটি লেখার ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়েছি কিন্তু প্রতিবেদনের বিষয় বস্তুর বৈজ্ঞানিক সত্যতা আমাদের দলবলের দ্বারা যাচায়িত।
সংবাদ সূত্র : https://www.nature.com/articles/s41586-025-08616-9